IQNA

আলহামদুলিল্লাহ। ফিলিস্তিন মুক্তি পাক।ইরান জয়ী হোক।

21:53 - April 14, 2024
সংবাদ: 3475336
ইকনা: ইসরাইলের তেমন ক্ষতি তো দেখলাম না।ওদের কোনো বাড়িঘর ধ্বংসের ছবিও দেখি নাই।

জবাব:
ইরানের টার্গেট মানুষ মারা নয় । ইরানের উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইলের সামরিক শক্তি খর্ব করা এবং গত ১ লা এপ্রিল ২০২৪ দামেশকে ইরান দূতাবাসের কনস্যুলেট ভবনে ইসরাইল বিমান আক্রমণ চালিয়ে ২ জন ইরানী জেনারেল ও ৭ জন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে - যারা ছিলেন সবাই সিরীয় সরকারের সামরিক উপদেষ্টা তাদের - হত্যা করলে সে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং সেটা ইরান করেছে ও সফল হয়েছে। ইরান ভা'দেয়ে সদেক্ব ( সত্য প্রতিশ্রুতি true promise আল ওয়াদুস সাদিক্ব  ) শিরো নামে এবং "ইয়া রাসূলাল্লাহ ( সা ) " এ সাংকেতিক নামে ইসরাইলের বিরুদ্ধে  সীমিত এ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে এবং দক্ষিণ ইসরাইলের নাকাব ( নেগেভ ) এলাকায় ইসরাইলী বিমান বাহিনীর এফ -৩৫ ঘাঁটি নেভাতীম ( যেখানে ৩ স্কোয়াড্রন এফ - ৩৫ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ) হামলা করে সেটার ব্যাপক ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করেছে এবং অধিকৃত গোলান মালভূমির কাছে জাবাল আশ শাইখে অবস্থিত ইসরাইলের প্রধান আঞ্চলিক গোয়েন্দা দফতর  এবং উত্তর ইসরাইলের রামোন হেলিকপ্টার ঘাঁটি ধ্বংস ও ব্যবহারের অনোপযোগী করেছে। নেভাতীম বিমান ঘাঁটি এবং এই হেলিকপ্টার ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার গাযায় বোমাবর্ষণ করে ।
    উল্লেখ্য যে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানী কনস্যুলেট হামলার পরিকল্পনা এই জাবাল আশ শাইখের গোয়েন্দা সদর দফতর করেছিল এবং দক্ষিণ ইসরাইলের নাকাবের এফ - ৩৫ বিমান ঘাঁটি নেভাতীম তা বাস্তবায়ন করেছিল এবং ঐ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ১লা এপ্রিল।
   এ ছাড়া উত্তর ইসরাইলের মেরূন পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ইসরাইলের ২য় বৃহত্তম বিমান ঘাঁটি ও রাডার ইনস্টলেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গতরাতে ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে ইসরাইল গাযায় বিমান হামলা করতে পারে নি এবং গাজা বাসীরা গত ছয় মাসের মধ্যে গতরাতে এই প্রথমবার মতো নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে। ইরান স্পষ্ট বলেছে : ইসরাইলের বেসামরিক এলাকা ও জনগণকে [ যদিও ইসরাইলে কোনো প্রকৃত সিভিলিয়ান ( বেসামরিক) লোক নেই । ইসরাইলের সকল নাগরিক নারী পুরুষ সবাই সামরিক ] এবং তাদের অর্থনৈতিক ও পাবলিক কেন্দ্র সমূহ টার্গেট করে নি। ইরানের যুদ্ধনীতি বেসামরিক এলাকায় হামলা নয়। তাই ইরান কেবল ইসরাইলী সামরিক কেন্দ্র ও ঘাঁটি গুলো টার্গেট করেছে এবং গত রাতের কয়েক ঘন্টার সীমিত সামরিক অভিযানের  পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছে আজ সকালে । 
    ইরান কয়েক শো ড্রোন এবং একশো ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের দিকে ছোড়ে এবং সেগুলোর এক বিরাট অংশ আয়রন ডোম , দাউদের ঢাল ( মিকলা' দাভীদ ) , তীর ( এ্যারো ) , থড ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পার হয়ে সেই সুদূর দক্ষিণ ইসরাইলের নাকাবে অবস্থিত এফ - ৩৫ বিমান ঘাঁটিতেও আঘাত হানে । আর তাই ইসরাইলী দৈনিক সংবাদ পত্র - পত্রিকা সমূহ প্রশ্ন তুলেছে যে এত সব অ্যান্টি মিসাইল ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এত সব ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বিভিন্ন ইসরাইলী নগর , শহর ও জনপদ অতিক্রম করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐ ইসরাইলী বিমান ঘাঁটিতে ( ন নেভাতীম ) পৌঁছাতে সক্ষম হল ? ইসরাইলী জনগণ রাত ভর তাদের মাথার ওপর দিয়ে ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন উড়ে যেতে দেখেছে এবং তারা তখন ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত এবং ঐ সব ইসরাইলী জনগণের ওপর ঐ ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হত ? ইসরাইলী পত্র পত্রিকা এ ধরনের প্রতিবাদ , উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ব্যক্ত  করছে নেতানিয়াহু সরকারের কাছে । মিসাইল অ্যাটাকের সময় ইসরাইলী জনগণ দৌঁড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ওয়ারশেল্টার সমূহে ।
ইরান বলেছে : যদি ইসরাইল এর পরও ইরান হামলা করে তাহলে এ অভিযানের চাইতেও সে দেশটি আরো ব্যাপক ও ভয়ানক অভিযান ও আক্রমণ চালাবে ইসরাইলের ওপর । ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও সাবধান ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে । যদি ইরান আক্রমণে ইসরাইলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে তাহলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ঘাঁটি এ আক্রমণের সাথে জড়িত থাকবে সেটার ওপরও হামলা চালাবে ।  ইরানের এই বার্তা ( মেসেজ ) পেয়েই বাইডেন নেতানিয়াহুকে জানিয়েছে যে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলায় অংশগ্রহণ করবে না !
গতকাল রাতে গাযা, জেরুজালেম , রামাল্লাহ এবং জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনীরা দেখেছে যে সমগ্র ইসরাইলের আকাশ জুড়ে ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছেড়ে গিয়েছিল এবং সেগুলোকে তারা ইসরাইলের বিমান ঘাঁটি , বিমান বন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলে পড়তে দেখেছে এবং সেগুলোর ছবি তুলে প্রকাশ করেছে ও করছে। ফিলিস্তিনীরা সবাই আনন্দ ও উল্লাস করছিল এবং ইসরাইলীরা সবাই ভয়ে চিৎকার,  চেঁচামেচি ও ফরিয়াদ করছিল । প্রাক্তন এক ব্রিটিশ সামরিক অফিসার বলেছে : ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরাইলের বহু সামরিক স্থাপনা ও বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে।
ইসরাইল নিরাপত্তা জনিত কারণে এবং তার জনগণ যেন আরও ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে যায় সেজন্য ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির ধ্বংসের পরিমাণ সংক্রান্ত খবর ও তথ্য পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকছে এবং কড়া সেন্সর শিপ আরোপ করেছে প্রেসের ওপর । এক সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন : ইরান দক্ষিণ ইসরাইলের নাকাবে নেভাতীম বিমান ঘাঁটিতে ৭ টা হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে যা ইসরাইলের অ্যান্টিমিসাইল ব্যবস্থাগুলো ইন্টারসেপ্ট করতে পারে নি এবং ঐ সাতটা হাইপার সোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ঐ ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। আগামী দিনগুলোতে এতদসংক্রান্ত আরও খবর ও তথ্য প্রকাশিত হবে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম সমূহে । গতরাতে    ইসরাইলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ছিল বলে সংবাদ মাধ্যম সিএনএন ( CNN ) মনে করে।
     গত তিন মাস ধরে ইয়ামানের ওপর মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা (ব্রিটেন) বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যে ব্যর্থ হয়েছে তা ইয়ামান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত টিমোথি লেন্ডারকিং এ মাসের ( এপ্রিল ২০২৪ )প্রথম দিকে  বলেছিলেন । আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়ামানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সামরিক কৌশলের ব্যর্থতার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন । তিনি বলেছেন : আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি । আমরা জানি যে এ (সংকটে)র কোনো সামরিক সমাধান নেই।
    একজন উচ্চ পদস্থ মার্কিন সেনা কম্যান্ডার গত তিন মাস ধরে ইয়ামানীদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন নৌবাহিনী  সবচেয়ে বড় যে সব যুদ্ধ করেছে সেগুলোর একটি বলে অভিহিত করেছেন।
 ( সূত্র The Cradle.com : Yemen's uninhibited attacks push French warship to exit Red Sea  : ইয়ামানের বাধাহীন ও বুনো (ধরনের) আক্রমণসমূহ ফরাসী যুদ্ধ জাহাজকে লোহিত সাগর থেকে বের করে দিয়েছে) ]
এই প্রবন্ধে লেখা হয়েছে : NATO forces have been unable to deter the proPalestine operations of the Yemeni armed forces despite heavily militarizing the Red Sea . লোহিত সাগর তীব্রভাবে সামরিকায়ণ করা সত্ত্বেও ন্যাটো বাহিনী ইয়ামানী সশস্ত্র বাহিনীর ফিলিস্তীন পন্থী ( অর্থাৎ গাজাবাসীদের সাহায্য করার জন্য পরিচালিত ) আক্রমণসমূহ প্রতিহত করতে পারে নি ।
এ প্রবন্ধে লেখা হয়েছে :
France's Aquitance - class FREMM frigate Alsace has been turned tail from the Red Sea after running out of missiles and munitions repelling attacks from the Yemeni armed forces . , according to its commander , Jerome Henry .
" ফ্রান্সের এ্যাকুন্টেন্স - ক্লাস ফ্রেম্ম্ ফ্রিগেট অ্যালসাস ( Alsace ) , ইয়ামানী সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত কারী ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নেড়ী কুকুর যেমন লেজ গুটিয়ে ভেগে যায় ঠিক তেমনি লেজ গুটিয়ে লোহিত সাগর থেকে পালিয়ে গেছে ! " ঐ ফ্রিগেটের কম্যান্ডার জেরোম হেনরির মতে ।
   সুতরাং গাযার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও আগ্রাসন বন্ধ , অবরোধ উঠিয়ে নেয়া ও গাযা থেকে ইসরাইলী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা না হলে ইয়ামান বাবুল মান্দাব - লোহিত সাগর সমুদ্র পথে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও বাঁধা দিতে থাকলে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা (যুক্তরাজ্য) গত জানুয়ারি মাস ২০২৪ থেকে ইয়ামানের বিরুদ্ধে হামলা ও যুদ্ধ শুরু করে এবং এর কিছু দিন পরে ফ্রান্স সহ ন্যাটো বাহিনীও মাযুরা ও যুরার সাথে যোগ দেয়। কিন্তু এর ফল কী হয়েছে? বীর ইয়ামানীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তিন মাস ধরে চলতে থাকা মাযুরা, যুরা ও ন্যাটোর সম্মিলিত এ আগ্রাসন ও যুদ্ধ অবশেষে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। যেখানে মহাশক্তিধর মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা ( যুক্তরাজ্য) , ফ্রান্স ও ন্যাটো বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত ইয়ামানের কাছেই হেরেছে সেখানে ইয়ামানের চাইতে বহু গুণ শক্তিশালী ইরানের কাছ গতরাতে ইসরাইল যে কেমন ভয়ঙ্কর মারটা খেয়েছে তা সহজেই অনুমেয় !
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান 
১৪-৪-২০২৪

ট্যাগ্সসমূহ: সত্য প্রতিশ্রুতি
captcha