IQNA

ক্রাইস্টচার্চের অধিবাসীদের ইসলাম সম্পর্কে জানানোর জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংগঠনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

19:31 - April 05, 2019
সংবাদ: 2608268
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের রাজপথ সমূহে স্থানীয় অধিবাসীদের উগ্রবাদ এবং ইসলামের সঠিক শিক্ষা দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি সংগঠন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। একই সাথে তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এমন লোকজনের করা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট:যুক্তরাজ্যে আজ থেকে প্রায় ১০ বছর পূর্বে ‘The City Centre Da'wah’ নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে আর অস্ট্রেলিয়ায় তাদের কেন্দ্র রয়েছে।

সংগঠনটির আকিল আবু ওমার নামের একজন সদস্য বলেন, ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর স্থানীয় লোকজন একটি সংকট ময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বিশেষত তরুন মুসলিমরা এর ফলে অনেক বেশী আবেগি হয়ে উঠেছে, তারা এমনকি আক্রমণের শিকার হচ্ছে একই সাথে অনেকে হয়ত প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে।

তিনি বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর আমরা দেখেছি অনেকে তরুন মুসলিমদের উগ্রপন্থী করার চেষ্টা চালাচ্ছে, অনেকে তাদের দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়েছে আবার অনেকে খুব আবেগী হয়ে উঠেছে।’

‘কেউ কেউ তরুন মুসলিমদের কিছু ভালো কথার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে অবস্থান নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যাতে করে এ পরিস্থিতিতে তাদের কে উগ্রপন্থার দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে, ঠিক এমনটিই ঘটতে চলেছে কিন্তু আমরা এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছি, কিছু লোক এমন আছে যারা পরিস্থিতির দ্বারা তাদের ফায়দা উঠাতে চাইবে।’

আকিল আবু ওমার বলেন, মুসলিমদের সম্পর্কে গণমাধ্যম সমূহ যেভাবে নেতিবাচক প্রথাগত সংবাদ প্রচার করে এর ফলে ধর্ম সম্পর্কে অনেকের মনে ভীতি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, ‘চুরি, খুন অথবা যেকোনো ধরণের বৈষম্য ইসলাম ক্ষমা করে দেয়ার শিক্ষা দেয়। লোকজনের মনে ইসলাম সম্পর্কে যে ধরনের নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান আমরা তা দূর করে দিতে চাই।’

‘আমরা যাদের সাথে যোগাযোগ করেছি তাদের অধিকাংশ জানিয়েছে যে, তারা ইসলাম সম্পর্কে গণমাধ্যম সমূহের কাছ থেকে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছে। যদি কোন মুসলিম কোন খারাপ কিছু করে তবে বেশিরভাগ গণমাধ্যম ওই মুসলিমকে তার নিজের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত করে সংবাদের শিরোনামে পরিণত করে। আর এর ফলেই লোকজনের মনে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছ।’

‘আমরা লোকজনদের কে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি যে, ইসলাম এধরনের অপরাধের স্বীকৃতি দেয় না। সুতরাং এর মধ্যে একজনের ধর্মকে টেনে নিয়ে আসা একেবারেই অযৌক্তিক।’

সংগঠনটির আলি মির নামের আরেক সদস্য একমত হয়ে বলেন, ইসলাম সম্পর্কে অবহেলা পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলা চালিয়েছে এবং এ হামলা চালানোর জন্য যে বিষয় সমূহ তাকে এ পথে ঠেলে দিয়েছে তা হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা না থাকা। সে হয়ত ইসলামের শান্তিপূর্ণ দিক সম্পর্কে অবগত নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ধর্ম কোন আগ্রাসন কারী ধর্ম নয়, আমাদের ধর্ম অমুসলিম ভূমি সমূহে আগ্রাসন চালানোর অনুমতি দেয় না। আমাদের ধর্ম শান্তিপূর্ণ ভাবে সহবস্থানের শিক্ষা দেয়।’

আলি মির বলেন, উগ্রপন্থীরা অনেক সময় প্রেক্ষাপট না জেনে পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত বেছে নেয় এবং তারা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে লোকজনদের ভয় ভীতি প্রদর্শনের জন্য তা ব্যাবহার করে।

তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের আয়াত সমূহ এর প্রেক্ষাপট জেনে অধ্যয়ন করা উচিত। তারা এইসমস্ত আয়াত সমূহ বেছে নেয় এবং তাদের নিজেদের মত করে ব্যাখ্যা করে। এর মাধ্যমে তারা যেমনটি চায় ঠিক তেমন অর্থ উঠে আসে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাইবেলে এমন অনেক বাক্য রয়েছে যা অন্যের সাথে যুদ্ধ করার কথা বলে। যদি আমি এইসমস্ত বাক্য এর মূল প্রেক্ষাপট না জেনে এর অর্থ ধরে নিই তবে এগুলো আমাকে অনেক লোককে হত্যা করার জন্য বৈধতা দেয়। কিন্তু এমনটি করা উচিত নয়।’

আলি মির বলেন, আইএসের এবং আল-কায়দার মত দল সমূহ রাজনৈতিক ভাবে উৎসাহী তারা ধর্মীয় ভাবে ততোটা উৎসাহী নয় এবং ইসলাম সম্পর্কে তারা ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

‘The City Centre Da'wah’ নামের সংগঠনটি একই সাথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন এবং হ্যামিল্টনে সফর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। radionz.co.nz

captcha