IQNA

খাসোগি ইস্যুতে বিভক্ত আরব গণমাধ্যম

16:06 - November 23, 2018
সংবাদ: 2607320
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আরব গণমাধ্যমে খাসোগির ঘটনাটি একটি বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শত্রুভাবাপন্ন দুই শিবির এই ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। আদর্শ নয়, বরং অর্থদাতা ও মালিকানার ওপরই নির্ভর করছে মিডিয়ার অবস্থান।

বার্তা সংস্থা ইকনা: বুধবার সৌদি সংবাদপত্র আল ওয়াতান দেশটির পাঠকদের জন্য কিছুটা হলেও ভালো খবর প্রকাশ করেছে। আর তা হলো, সৌদি আরবের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর ডয়েচে ভেলের।

বিবৃতিতে ঠিক এমন বক্তব্যই দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সৌদি আরব এখনো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। খাসোগি ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সব তথ্য জানা কষ্টসাধ্য হবে’।

তবে ট্রাম্পের অবস্থান সম্পর্কে খণ্ডিত তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রটি। কারণ, একই বিবৃতিতে ট্রাম্প এ-ও বলেছেন যে, খাসোগি হত্যার ঘটনা সম্পর্কে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (সংক্ষেপে এমবিএস) অবগত ছিলেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে বক্তব্যের এই অংশটুকু একেবারেই এড়িয়ে গেছে আল ওয়াতান।

অন্য কোনো সংবাদপত্র না পড়লে আল ওয়াতান পাঠকদের মনে হতেই পারে, খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে কোনো প্রভাবই পড়েনি।

একই ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করেছে সৌদি নিউজ চ্যানেল আল আরাবিয়া। ‘পুরো সত্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না’, ট্রাম্পের এমন বক্তব্য ঠিকই প্রচার করেছে চ্যানেলটি। কিন্তু আল ওয়াতান পত্রিকার মতোই, সৌদি যুবরাজের সাথে ট্রাম্পের যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা সুচতুরভাবে এড়িয়ে গেছে আল আরাবিয়া।

সংবাদের এই অংশটুকু ভালোভাবে নেয়নি সৌদি রাজপরিবার। ফলে প্রচারিত সংবাদ থেকে বাদ পড়েছে ট্রাম্পের বক্তব্যের এই অংশটুকুও।

মালিকানায় বিপত্তি

ট্রাম্পের বক্তব্যের ঠিক অন্য একরকম ব্যাখ্যা মিলছে কাতারের টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার দর্শকদের। ট্রাম্পের বিবৃতি উদ্ধৃত করে চ্যানেলটির সংবাদে বলা হয়েছে, ‘রিয়াদ বা ওয়াশিংটনে অবস্থান করা কোনো বিশেষ ব্যক্তির রাজনৈতিক আদর্শ টিকিয়ে রাখার ওপর সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক নির্ভর করে না, এই স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে’।

এমন অবস্থানের মাধ্যমে স্পষ্টতই আক্রমণ করা হয়েছে বিন সালমানকে। মাত্র দেড় বছর আগে এই সৌদি যুবরাজই নানা ধরনের বয়কটের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে কাতারকে একঘরে করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

আল-জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ রাজনৈতিকভাবে পরাক্রমশালী হতে পারেন, কিন্তু সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে তার অবস্থান খুবই নগণ্য। রাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধির তুলনায় রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে চ্যানেলটিতে। সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিন সালমানও শেষ পর্যন্ত অন্য অনেক রাজনীতিবিদের মতোই একজন এবং শেষ বিচারে তিনিও প্রতিস্থাপনযোগ্য।

ক্ষমতার লড়াই

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধরদের অর্থনীতি-রাজনীতি প্রভাব ফেলছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর গণমাধ্যমেও। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থান তো বটেই, অর্থদাতাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেও সংবাদ প্রকাশের অবস্থান নির্ধারণ করতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোকে। অন্যান্য ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত স্বাধীনতা থাকলেও খাসোগি ইস্যুতে তৈরি হয়েছে একে অপরকে ‘এক হাত দেখে নেয়ার’ মানসিকতা।

জার্মানির মাইনজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আরব ওয়ার্ল্ড-এর প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ গ্যুন্টার মেয়ার বলছেন, ‘আরব বিশ্বে গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই’। তিনি বলেন, ‘অঞ্চলটির কম-বেশি সব দেশেই স্বৈরাচারী শাসন চলছে৷ শাসকদের সমালোচনা করতে পারে, এমন কোনো সংবাদমাধ্যমের অস্ত্বিত্বই নেই সেখানে’।

আল-জাজিরার সাথে সম্পর্কিত কাতারি সংবাদপত্র আল-আরাবি আল-জাদিদ সৌদি আরবের সমালোচনা করে বলছে, ‘সৌদি আরবের নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন বিন সালমান’। পত্রিকাটি বলছে, ‘খাসোগির হত্যাকাণ্ড সৌদি রাজনীতির সামরিকীকরণ, অসহিষ্ণু আচরণ, সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেয়ার মানসিকতার প্রমাণ’। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রিয়াদকে সামলানো ক্রমশই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে বলেও মনে করে পত্রিকাটি।

অন্যদিকে, আল-জাজিরা নামের এক সৌদি সংবাদপত্র খাসোগি ইস্যুকে সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। কাতার ও তুরস্কের বিরুদ্ধে খাসোগি ইস্যুতে ‘কাল্পনিক গল্প বানানোর অভিযোগ তুলেছে পত্রিকাটি।

 

captcha