IQNA

শিকাগোয় ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে ধর্মান্তরিত ল্যাটিনো মুসলিমদের সংখ্যা

14:48 - July 01, 2018
সংবাদ: 2606105
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শিকাগোর মরটন গ্রুভের মসজিদে মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষরা পাশাপাশি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। তাদের পিছনে নারীরাও আলাদা স্থানে মাথায় হিজাব পরিধান করে নামাজ আদায় করেন। একই সময়ে শিকাগো সহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমরাও মক্কার দিকে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।


বার্তা সংস্থা ইকনা: রমজান মাসে মুসলিমরা রোজা পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রার্থনায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের খাবারের গ্রহণের মাধ্যমে তাদের উপবাস ভাঙেন।

মর্টন গ্রোভের মসজিদের মুসল্লিরা আরবি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। তাদের বেশিরভাগের শিকড়ই ভারত, পাকিস্তান, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইনে। সেখানে কিছু স্প্যানিশ ভাষাও শোনা গেছে।

ইফতারিতে ঐতিহ্যবাহী পাকিস্তানি ও ভারতীয় খাবার- ডাল, বাটার চিকেন ও নান রুটির পাশাপাশি মেক্সিকান খাবার ‘মোলেই আরোজ’ও ছিল।

মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, পুয়ের্তো রিকো এবং পেরু থেকে আসা এসব মুসলিমরা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ; যাদের প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।

শিকাগো এলাকায় ঠিক কতজন ল্যাটিনো মুসলমান বাস করে তা কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই হচ্ছে ল্যাটিনো। কিন্তু বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী, সেখানে শহর ও উপশহর মিলিয়ে ১৩০টি মসজিদ রয়েছে। সেখানে ধর্মান্তরিত ল্যাটিনো মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে।

ল্যাটিনো-আমেরিকান দাউয়াহ সংস্থার সাবেক পরিচালক জুয়ান গালভেন জানান, সেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসলিম রয়েছে। ল্যাটিনো মুসলিম জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশের বসবাস শিকাগোতে বলে তিনি জানান।

সংগঠনটির বর্তমান পরিচালক এবং ইনার-সিটি মুসলিম অ্যাকশন নেটওয়ার্কের একজন অ্যাটর্নি অ্যারোন সাইবার্ট-লারিয়া জানান, কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম জনসংখ্যা শিকাগোতে প্রধানতম মুসলিম গোষ্ঠী।

অ্যারোন সাইবার্ট-লারিয়া

তিনি জানান, ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর ও দক্ষিণপশ্চিমাংশে পৃথকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এবং আরব মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সঙ্গে অন্যান্য অভিবাসী গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে।

তিনি বলেন, ‘শিকাগোতে সব সময়েই বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। তবে, এখানকার মুসলিম অভিবাসীরা একই ধরনের প্যাটার্ন অনুসরণ করেন।’

সিয়বার্ট-লারিয়া জানান, শিকাগোর ল্যাটিনো মুসলমানেরা অন্য শহরের তুলনায় আরো বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ল্যাটিনো জনগোষ্ঠীর উপাসনার জন্য হিউস্টনে ২০১৬ সালে ‘সেন্ট্রো ইসলামিক মসজিদ’ খুলে দেয়া হয়।

কিন্তু শিকাগোতে পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমানভাবে চিহৃ দেখা যাচ্ছে। হিউস্টনে স্প্যানিশ ভাষায় গঠিত ইসলামি সংগঠন এখন শিকাগো চ্যাপ্টারে স্থান পেয়েছে। ‘ওজালা’ নামে একটি নতুন অলাভজনক সংস্থা গঠন করার মাধ্যমে তরুণ ল্যাটিনো মুসলিমরা এখানে জড়ো হচ্ছেন এবং তাদের নিজস্ব মসজিদ স্থাপনের চেষ্টা করছেন।

ফেলিসিয়া সালামাহ, যিনি তার স্বামী ও দুই পুত্রের সঙ্গে অরল্যান্ড পার্কে বসবাস করেন। তিনি নিকটবর্তী একটি মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন এবং তার বড় ছেলেকে পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন; যেখানে তিনি আরবি ভাষায় কুরআন পড়া শিখছেন।

ফেলিসিয়া সালামাহ

ফেলিসিয়ার মা একজন মেক্সিকান ক্যাথলিক এবং বাবা একজন ফিলিস্তিনি মুসলিম।

অন্যান্য ল্যাটিনো মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক তাকে ইসলামের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। স্প্যানিশ গ্রুপের অন্যান্য মুসলিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি হিজাব পরিধানের দিকে আরো বেশি অগ্রসর হন। তিনি ইসলাম সম্পর্কে আরো শিখছেন এবং সারাদেশের ল্যাটিনো মুসলমানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য টেক্সাসে ভ্রমণ করেছেন।

সালামাহ বলেন, ‘সেখানে আমি মেক্সিকান এবং পুয়ের্তো রিকানস এবং কলম্বিয়ান মুসলিমদের দেখতে পেয়ে খুব ভাল লেগেছিল।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ল্যাটিনো ইংরেজী বলতে না পারেন, তবে তারা তাদের স্প্যানিশ ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন।’

অনেক ল্যাটিনোর ইসলাম গ্রহণ করার পেছনে শক্তিশালী ক্যাথলিক সংস্কৃতি একটি কারণ হতে পারে বলে সালামাহ মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘ক্যাথলিক বা খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেন, তারা উপলব্ধি করতে পারেন যে, এটি সেই সমস্ত জিনিস যা তারা ইতোমধ্যেই বিশ্বাস করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামই একমাত্র অ-খ্রিস্টীয় বিশ্বাস যা যিশুকে বিশ্বাস করে।’

লেখক: অ্যালেক্সজান্দ্রা আরিয়াজা

চিকাগো সানটাইমস ডটকম অবলম্বনে

captcha