IQNA

‘মালয়েশিয়া সরকারের নীতি হচ্ছে ইসলামের দয়াশীল বাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়া’

12:13 - October 15, 2018
সংবাদ: 2607005
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ড. মুজাহিদ ইউসুফ রাওয়া বলেছেন, আমাদের দেশে সকল ধরনের মুসলিমদের স্বাগত জানানো উচিত। মালয়েশিয়ার সরকারের নীতি হচ্ছে ইসলামের দয়াশীল বাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়া। দ্যা স্টার অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন জাহাবারদীন মো. ইউনুস। পুরো সাক্ষাৎকারটি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

বার্তা সংস্থা ইকনা: মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি শুধুমাত্র ‘ইসলাম’ ধর্মের শিক্ষাই মানুষকে দয়া করতে, ভালবাসতে এবং ক্ষমা করতে শেখায়। যেকেউ পবিত্র কুরআন পড়লে দেখতে পাবে যে, পবিত্র কুরআন নিজেকে ‘বিশ্বাসীদের জন্য দয়াশীল’ বলে বর্ণনা করেছে।’

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে পবিত্র কুরআনে পুরো বিশ্ব জাহানের জন্য ‘রাহমাতান-লিল-আলামিন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ-সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা আল আনাবিয়া এর ১০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে।

‘রাহমা’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ভালবাসা এবং অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহর ভালোবাসা। তিনি তার সৃষ্টিকুলকে প্রয়োজনীয় সবকিছুই দান করেছেন। পবিত্র কুরআন আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার রহমত পাওয়ার জন্য পথ প্রদর্শন করে।

ড. মুজাহিদ বলেন, আমরা ইসলাম-ভীতির মুখোমুখি হই। এমনকি কিছু মুসলিম অন্য মুসলিম ভাইদের প্রতি বৈষম্য করে থাকেন। এসকল কার্যক্রমের অবসান হওয়া দরকার।

অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ বর্তমান শতাব্দীর সাথে তাল মিলিয়ে তাদের চিন্তা চেতনাকে তুলে ধরতে পারছেন না। ৩০ বছর পূর্বের চিন্তা চেতনা এবং প্রযুক্তির সাথে আজকের যুগের কোনো কিছুরই মিল নেই।

এমনকি মুসলিমরা এখন বুঝতে পরেছে যে, কিছু তথাকথিত ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ ইসলামের জন্য কোন অবদান রাখছেন না বরং তারা ইসলামকে শুধুমাত্র একটি আইন হিসেবে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট রয়েছেন।

নিঃসন্দেহে ফিকাহ বা ইসলামী আইন একজন মুসলিমের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কিন্তু এর বাহিরে ও ইসলামের অন্যান্য দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্র কুরআনে ধর্মের প্রতি ভালোবাসা এবং নৈতিক দিক নিয়ে অন্তত ৬,২৩৬ টি আয়াত রয়েছে আর অন্যদিকে ইসলামি ফিকাহ বা ইসলামি আইন নিয়ে ৩৫০ টি আয়াত রয়েছে।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত কারী প্রত্যেকেই জানেন যে, কুরআনে বর্ণিত অপরাধের শাস্তির পাশাপাশি তওবা কারীদেরকে এসব পাপের জন্য ক্ষমা প্রদর্শনের কথাও বলা হয়েছে।

ইসলামকে যেভাবে একটি কঠিন ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেভাবে ইসলামের দয়া এবং ক্ষমাশীলতার কথা প্রচার করা হয়নি।

কোন মুসলিমই একথা বলতে পারবে না যে, মুসলিম বিশ্বের সবকিছুই নিষ্কলঙ্ক। আমদের আইন, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি এবং আরো অনেক বিষয়কে আমরা ভুল পথে পরিচালিত করেছি।

এখন আমি মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক নেয়া ক্ষমাশীল ইসলামের প্রচার অভিযানকে সমর্থন করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

মালয়েশিয়ার মুসলিমদেরকে অবশ্যই এমন একটি ‘ইসলামের দেখা’ পাওয়া উচিত যা তার পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে কামনা করে আসছে।

এখন থেকে বিশ বছর পূর্বে আমাদের ছোট একটি দল মালয়েশিয়ার নাগরিকদের ধৈর্য এবং ক্ষমাশীল করতে একটি আন্দোলন শুরু করেছিল। কারণ আমরা বিশ্বাস করি একমাত্র শিক্ষিত নাগরিক সমন্বিত সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

মুসলিমদের অবশ্যই করুণা এবং দয়াশীল হতে হবে যাতে করে তারা অন্যের বিপদ-আপদগুলো দূর করতে সহায়তা করতে পারে।

উদাহরণ স্বরূপ- আমরা এমন একজনকে জানি যিনি অত্যন্ত গরীব। আমরা তখন শুধুমাত্র তার প্রতি করুণা প্রদর্শনই করবো না বরং তার অভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব সহানুভূতি দেখাতে। যাতে সকলেই ইসলামের সুন্দর দিকটি উপলব্ধি করতে পারে।

যখন রাষ্ট্র কোনো অপরাধীরকৃত অপরাধের জন্য দায়ী তখন অপরাধীদেরকে কঠিন সাজা দেয়া একটি রাষ্ট্রের ভূমিকা হতে পারে না।

একই সাথে ধর্মকে আক্রমণাত্মক এবং পিছিয়ে পড়া হিসেবে উপস্থাপন করলে এর দয়াশীলতা ঢাকা পড়ে যাবে আর লোকজন সৃষ্টিকর্তা থেকে দূরে সরে যাবে।

সুতরাং মুসলিমদেরকে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত যাতে করে ইসলামের সর্বোচ্চ দয়ার দিকটি উঠে আসে। এমএসএন ডট কম।

 

captcha